বগুড়ার শেরপুর উপজেলার বিশালপুর ইউনিয়নের শিমলা-সাতবাড়িয়া সরকারি খাল খননের জায়গা নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়েছে। ফলে খাল খনন কার্যক্রম অন্তত সাত দিন ধরে বন্ধ হয়ে আছে। ঘটনাটি নিয়ে উভয় পক্ষ শেরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে পাল্টাপাল্টি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
শেরপুর উপজেলা কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) কার্যালয় থেকে জানা গেছে, ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ১৫মে শিমলা-সাতবাড়িয়া সরকারি খাল খনন কাজ শুরু করা হয়। খালটির দৈর্ঘ্য দুই কিলোমিটার। খননের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ২০ লাখ টাকা। খাল খনন কাজ শেষ হওয়ার কথা ৩১ ডিসেম্বর। তবে এরই মধ্যে খালটি খননের প্রায় ৭৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে।
স্বাধীনতার আগে এ খাল তৈরি করা হয়। স্বাধীনতার পর খালটি আবার খনন করা হয়। বর্তমানে খালের অনেকাংশ মাটিতে ভরাট হয়ে যাওয়ায় পুনরায় খননকাজ চলছিল। খননকালে শিমলা গ্রাম দিয়ে যাওয়ার সময় আজিজুল হক খালের মধ্যে তার নিজস্ব জমি আছে বলে দাবি করে বাধা দেন। তার দাবি করা জমির পরিমাণ অন্তত ১০০ মিটার। এ কারণে খাল খনন বন্ধ রয়েছে।
ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপক সাইফুল ইসলাম জানান, শিমলা গ্রামটির পশ্চিম পাশে এ খাল। খালটিতে এখন পানি প্রবাহিত হয়। তবে খালের গভীরতা কম। খালের মধ্যে কৃষক আজিজুল হকের নিজস্ব জমি রয়েছে বলে দাবি করছেন। একইসঙ্গে খাল খনন করতেও নিষেধ করেছেন। এ কারণে খনন বন্ধ রেখেছেন।
শিমলা গ্রামের কৃষক আজিজুল হক জানান, যে জমির ওপর দিয়ে খাল খনন করা হচ্ছে, তা তাদের পরিবারের কেনা সম্পত্তি। দু’টি দাগে তাদের সম্পত্তির পরিমাণ ৫২ শতক। সর্বশেষ মাঠ খতিয়ান তাদের নামে হয়েছে। ধান চাষের অনুপযোগী হয়ে পড়ায় এ জমিতে চাষাবাদ বন্ধ রয়েছে। জমিটি তাদের সম্পত্তি হওয়ায় খনন কাজে নিষেধ করেছেন। এছাড়া খাল খননের নকশাতেও সেটি পরিস্কারভাবে উল্লেখ আছে। তারপরও খাল খননের নকশা পরিবর্তন করে তাদের ব্যক্তি মালিকাধীন জায়গা দিয়ে খাল খননের চেষ্টা করা হচ্ছে।
এদিকে শিমলা গ্রামবাসীর পক্ষে এ বিষয়ে কথা বলেন মশিউর রহমান। তিনি জানান, এই মৌজার জমিগুলো পাশের মৌজাগুলোর চেয়ে অন্তত পাঁচ ফুট নিচু। এ কারণে প্রতিবছর অতিবৃষ্টিতে মাঠের উৎপাদিত ফসল ঘরে তোলার আগেই পানিতে ডুবে যায়। জলাবদ্ধতার কারণে এ মৌজার কৃষক অন্তত তিনশ একর জমির চাষাবাদের সুযোগ থেকে বঞ্চিত। খালটি খনন করা হলে বৃষ্টির পানি খালে জমে থাকবে। তাতে বোরো মৌসুমে ধান চাষসহ অন্য ফসল চাষে অনেক উপকারে আসবে।
তিনি আরো জানান, বিগত সময়ে ওই জমির ওপর দিয়ে সরকারি উদ্যোগে খাল খনন করা হয়। সে সময় কেউ বাধা দেয়নি। কিন্তু এখন আজিজুল হকের পরিবার থেকে কেনা সম্পত্তি দাবি করে বাধা দেওয়া হচ্ছে। এ নিয়ে গ্রামের মানুষের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
শেরপুর উপজেলা কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন দপ্তরের উপ-সহকারী প্রকৌশলী আসমাউল বিন হোসেন বলেন, খালটি তারা সংস্কারের জন্য খনন কার্যক্রম শুরু করেছেন। খননের ফলে অতিবৃষ্টির পানি খালে জমে থাকবে। এতে কৃষকের অনেক উপকার হবে।
বগুড়ার শেরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) লিয়াকত আলী সেখ বলেন, ঘটনাটি নিয়ে উভয়পক্ষ লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পাশাপাশি বিবাদমান দুই পক্ষকেই শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে বলা হয়েছে।