গাজীপুরের শ্রীপুরে একটি মোবাইল ফোনসেটের জন্য চার বছর বয়সী এক শিশুকে মাথা থেঁতলে হত্যা করেছে আরেক শিশু। হত্যায় অভিযুক্ত শিশুর বয়স মাত্র ১০ বছর। সে ওই শিশুটিকে দিয়ে ঘর থেকে তার মায়ের মোবাইল ফোনসেট আনিয়ে তা নিয়ে নেয়। পরে মোবাইল ফোনসেটটির কথা বলে দিতে পারে আশঙ্কায় বাড়ি থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে নির্জন স্থানে নিয়ে শিশুটিকে নির্মমভাবে হত্যা করে।
গতকাল সোমবার বিকেলে উপজেলার দারোগারচালা এলাকায় এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। হত্যায় অভিযুক্ত শিশুর স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে পুলিশ গতকাল রাত সাড়ে ১০টার দিকে মরদেহ উদ্ধার করেছে।
নিহত শিশুর নাম সিফাত আহমেদ। সে নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার উত্তর ঝুনাগাছ চাপানী গ্রামের আবু বকর সিদ্দিকের ছেলে। আবু বকর সিদ্দিক শ্রীপুরের কেওয়া পশ্চিমখণ্ড (মাওনা চৌরাস্তা বর্ণমালা রোড) গ্রামের হাজি আবদুস সালামের বাড়িতে ভাড়া থেকে একটি ওষুধ কম্পানিতে চাকরি করেন। হত্যায় অভিযুক্ত শিশুর পরিবারও একই বাড়ির ভাড়াটিয়া।
সিফাতের বাবা আবু বকর সিদ্দিক জানান, গতকাল দুপুর ১টার দিকে সিফাত একই বাড়ির পাশের কক্ষের ছেলেটির সঙ্গে খেলার জন্য বাইরে যায়। পরে তাকে (সিফাত) আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। বিকেলে ওই ছেলের (হত্যায় অভিযুক্ত) কাছে জানতে চাইলে সে জানিয়েছিল, সে শিশুটিকে বাসার গেটে পৌঁছে দিয়েছিল। পরে ব্যাপক খোঁজাখুঁজির পরও হদিস না পেয়ে এলাকায় মাইকিং করা হয়। সন্ধ্যায় শিশুর নিখোঁজের ঘটনায় থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (নম্বর ৭১৬) করেন তিনি।
শ্রীপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. মনিরুজ্জামান খান জানান, পুলিশ ছেলেটিকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে অসংলগ্ন আচরণ করে সে। একপর্যায়ে হত্যার ঘটনা স্বীকার করে সে। পরে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বাড়ি থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে সীমানাপ্রাচীরঘেরা একটি নির্জন স্থান থেকে শিশুর মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
মনিরুজ্জামান খান আরো জানান, শিশুটির মাথা থেঁতলানো ছিল। পেটে উপর্যুপরি ধারালো অস্ত্রের আঘাতে নাড়িভুঁড়ি বেরিয়ে গেছে। তিনি জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যায় অভিযুক্ত ছেলেটি পুলিশকে জানিয়েছে, খেলার কথা বলে সিফাতকে সে সবার অগোচরে তার মায়ের মোবাইল ফোনসেটটি নিয়ে আসতে বলে। পরে মোবাইল ফোনসেটটি সে ঘরের পাশে লুকিয়ে ফেলে। তা বলে দিতে পারে আশঙ্কায় পাশের দারোগারচালা এলাকায় সীমানাপ্রাচীরঘেরা নির্জন স্থানে নিয়ে ভাঙা কাচের বোতল দিয়ে শিশুটির পেটে উপর্যুপরি আঘাত করে। পরে মৃত্যু নিশ্চিত করতে ইট দিয়ে মাথা থেঁতলে দেয় শিশুটির।
মনিরুজ্জামান খান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘হত্যাকাণ্ডে ছেলেটির সঙ্গে আরো কেউ জড়িত কি না তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। হত্যাকাণ্ডটি স্রেফ একটি মোবাইল ফোনসেটের জন্যই কি না, তা তদন্ত করে দেখা হবে।’