”মা-বাবার সাথে যা করেছি এখন তার বদলা পাচ্ছি” – বৃ’দ্ধাশ্রমে ৭০ ব’য়সী এক বৃ’দ্ধার কা’ন্না – জীবনের শেষ ব’য়সে আজ আমি স’ন্তানদের থেকে বিতাড়িত। নিঃস্ব স্বজনহীন একাকী’ জীবনে বৃ’দ্ধাশ্রমই আমা’র ঠিকানা। এসবের জন্য আমিই দায়ী।
কারণ জীবনে আমি আমা’র বাবা-মা’র সাথে যা আচরণ করেছি এখন শেষ ব’য়সে আমা’র স’ন্তানদের কাছে থেকে তার বদলা পাচ্ছি।নয়তো এমন হওয়ার কথা নয়। শেষ জীবনে আমা’র স’ন্তানদের কাছ থেকে অবহেলা, অবজ্ঞা সর্বশেষ ঘরছাড়া হয়ে আজ আমি তা উপলব্ধি করতে পেরেছি’।
জীবনের বাস্তব উপলব্দি থেকে এমনটাই বলছিলেন বৃ’দ্ধাশ্রমে থাকা ৭০ বছরের এক প্রবীণ। জীবনের ফে’লে আসা স্মৃ’তি মনে করে বুক চে’পে ধরে হাউমাউ করে তিনি কাঁদছিলেন।
বললেন, ‘কথাগুলো কারো কাছে কোনোদিন বলিনি। কিন্তু এখন আর পারছি না। অন্তত তোমাদের শিক্ষার জন্য আজ বলব।শোন, আমা’র এমন পরিণতির জন্য আমিই দায়ী। সবই আমা’র দোষ।
জীবনে আমি যদি আমা’র বাবা-মায়ের সাথে ভালো আচরণ করতাম তবে আজ হয়তো আমাকে স্বজনবিহীন হয়ে বৃ’দ্ধাশ্রমে আসতে হতো না। স’ন্তানদের কাছে অ’পমাণিত হতে হতো না। সবই আমা’র কপাল। সবই আমা’র কর্মের ফল। যা আজ আমা’র স’ন্তানদের কাছ থেকে আমি ফেরত পাচ্ছি’। এরপর একটু শান্ত হয়ে
‘এখন যদি বাবা-মা বেঁচে থাকতেন তবে তাদের পায়ে পড়ে ক্ষমা চেয়ে নিতাম।তাতে অন্তত আমা’র অন্তরের জ¦ালা কিছুটা হলেও কমত। কিন্ত তা তো আর সম্ভব না। আমি বুঝতে পারছি এভাবেই মা’নসিক যন্ত্র’ণার পু’ড়ে আমাকে শেষ পর্যন্ত বিদায় নিতে হবে’।তার জীবন সর্ম্পকে জানতে চাইলে তিনি বলতে শুরু করলেন অ’তীতের কথা।
জানালেন ছোট থেকেই অ’ত্যন্ত মেধাবী ছিলেন তিনি। কৃষক পরিবার হওয়ায় অর্থক’ষ্ট লেগেই থাকত সংসারে। ভাই বোনদের মধ্যে অ’ত্যন্ত মেধাবী ও লেখাপড়ার প্রতি প্রবল ই’চ্ছা থাকায় স্থানীয় পাঠশালায় ভর্তি করে দেন তার পিতা। প্রতিটি পরীক্ষায় ফলাফলও ভালো করেন। পড়াশোনা শেষ করে স’রকারি উচ্চ পদে চাকরিতে যোগ দেন, বিয়ে করেন।
এরপর থেকে কারণে-অকারণে বাবা-মায়ের সাথে খা’রাপ ব্যবহার করেছেন।নিজের টাকা পয়সা থাকার পরও তাদের অর্থক’ষ্টে রেখেছেন। একপর্যায়ে বা’ধ্য হয়ে বাবা-মা গ্রামে চলে যান। এরপর অ’ভিমানে তারা তার সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। মা’রা যাওয়ার আগ পর্যন্ত পিতা-মাতার সাথে তার যোগাযোগ বন্ধ ছিল। তিনি বলেন, ‘আজ আমি তাদের জায়গায়।
এ ব’য়সে তাদের চেয়েও করুণ অবস্থায় আছি। আমা’র তিন স’ন্তানের সবাই ভালো চাকরি করছে। রাজধানীতে বাড়ির মালিক আমি। অথচ আমা’র টাকায় করা বাড়ি থেকে আজ আমি বিতাড়িত।স’ন্তানদের কেউই আমা’র খোঁজ নেয় না। যে দিন বের করে দেয় সেদিন অনেক কেঁদেছি।
তাদের বললাম, আমি না হয় বারান্দায় থাকব তবুও আমাকে বের করে দিওনা। কিন্তু তারা শুনল না। আমা’র কারণে নাকি তাদের সমস্যা হয়, ঘর নোং’রা হয়, কথাগুলো বলতে বলতে কা’ন্নায় ভে’ঙে পড়েন তিনি। এরপর চোখ মুছতে মুছতে বললেন,
এখন বুঝিÑ এসবই আমা’র বাবা মায়ের অ’ভিশাপ।আমি যদি আমা’র পিতা-মাতার প্রতি অবিচার না করতাম তাহলে আমা’র স’ন্তানরা আমা’র সাথে এমন করত না। আমি সব সময় দোয়া করি আমা’র স’ন্তানরা যেন কখনোই বৃ’দ্ধ না হয়, তাহলে তারা এত ক’ষ্ট সহ্য করতে পারবে না’।