করোনার সময়েও বিশ্বের মানব উন্নয়ন সূচকে এগিয়ে যাওয়ার ধারাবাহিকতায় গত ৩০ বছরে বাংলাদেশ এগিয়েছে ৬০ শতাংশ। দক্ষিণ এশিয়ার আটটি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান পঞ্চম। পরিবেশের প্রভাবজনিত সমন্বিত মানব উন্নয়ন সূচকে আরো ৯ ধাপ এগিয়েছে বাংলাদেশ। সর্বশেষ মানব উন্নয়ন সূচকে বাংলাদেশ আরো দুই ধাপ এগিয়েছে। বর্তমানে এ সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ১৩৩তম। এ ছাড়া মানুষের প্রত্যাশিত গড় আয়ু বেড়েছে ১৪.৪ বছর।
গতকাল সোমবার রাজধানীর শেরেবাংলানগরে অবস্থিত এনইসি সম্মেলনকক্ষে ‘দ্য নেক্সট ফ্রন্টিয়ার : হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড অ্যানথ্রোপসেন’ শিরোনামে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি)।
মানব উন্নয়ন সূচকের মাধ্যমে মূলত একটি দেশের মানুষের স্বাস্থ্য, শিক্ষা, জীবনযাত্রার সামগ্রিক অবস্থা পরিমাপ করা হয়। তবে এবার মানব উন্নয়ন সমীক্ষা প্রবর্তনের ৩০তম বার্ষিকীতে দুটি বিষয় নতুনভাবে যুক্ত করা হয়েছে। তা হলো কার্বন ডাই-অক্সাইড নিঃসরণের মাত্রা ও মোট ব্যবহৃত সম্পদের পরিমাণ।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মানব উন্নয়নে বাংলাদেশের অর্জন অসাধারণ। ১৯৯০ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত এই ৩০ বছরে মানব উন্নয়ন সূচক ৬০.৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৯ সালে বাংলাদেশের সূচকের মান মধ্যম সারির দেশগুলোর গড় মানের চেয়ে বেশি ছিল।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, কভিড-১৯ অতিমারি সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে বড় সংকট হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। পরিবেশের ওপর মানুষের ক্রমাগত অভিঘাত বন্ধ না হলে, ভবিষ্যতেও মানবজাতিকে এরূপ সংকটের মুখোমুখি হতে হবে।
এ সময় পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ‘নিজের মায়ের রক্ত খেয়ে যেমন বাচ্চা বাড়ে, ঠিক তেমনি প্রকৃতিকে খেয়েও আমরা মানবজাতি বেড়েছি। সুতরাং আমাদের মধ্যে সচেতনতা এসেছে যে মাকেও বা প্রকৃতিকেও রক্ষা করতে হবে। সেদিকেও আমাদের নজর ঘোরাচ্ছি।’
প্রতিবেদনটি প্রকাশের সময় জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির প্রধান আকিম স্টেইনার বলেন, ‘পৃথিবীর প্রতিটি দেশই পরিবেশেকে ধ্বংস করে মানব উন্নয়নে সমৃদ্ধি লাভ করেছে। তবে প্রথম প্রজন্ম হিসেবে আমরা এই ভুল সংশোধনে এগিয়ে আসতে পারি। এটিই হওয়া উচিত মানব উন্নয়নের পরবর্তী পদক্ষেপ।’
ইউএনডিপির আবাসিক প্রতিনিধি সুদীপ্ত মুখার্জি বলেন, ‘বাংলাদেশে কভিড-১৯ অতিমারিতে এখন পর্যন্ত সাত হাজারের বেশি মানুষ মৃত্যুবরণ করলেও প্রাণহানির পাশাপাশি অতিমারিজনিত সামগ্রিক প্রভাব আরো অনেক বিস্তৃত ও প্রকট। বহু পরিবার জীবিকা হারিয়ে দারিদ্র্যসীমানার নিচে নেমে গেছে, আয় অসমতা বেড়েছে এবং লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা বেড়েছে। পাশাপাশি লেখাপড়া থেকে দীর্ঘ বিরতির কারণে শিক্ষার্থীদের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা থেকে ঝরে পড়ার আশঙ্কা বেড়েছে।’
ইউএনডিপির প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, ১৯৯০ থেকে ২০১৯ সাল নাগাদ বাংলাদেশের মানুষের প্রত্যাশিত গড় আয়ু বেড়েছে ১৪.৪ বছর, গড় শিক্ষাকাল বেড়েছে ৩.৪ বছর এবং প্রত্যাশিত শিক্ষাকাল বেড়েছে ছয় বছর। এ ছাড়া এ সময়ে মাথাপিছু আয়ের পরিমাণও বেড়েছে প্রায় ২২০.১ শতাংশ।