আসসালামু আলাইকুম ও রহমাতুল্লাহি ওবারাকাতুহ্
“কষ্ট করে কিছু সময় ব্যয় করে পড়ুন।আপনার জীবন পাল্টাতে সহযোগিতা করবে”।
“ইরাকের বিখ্যাত আলেম মালেক বিন দিনার”
★একবার এক বিশাল মাহফিলে বক্তব্য দিতে দাঁড়াতেই এক শ্রোতা বলে উঠলেন, আপনার বক্তব্য শুরু করার আগে আমার একটা প্রশ্নের উত্তর দিন। “মালেক বিন দিনার” প্রশ্ন করার অনুমতি দিলেন।
বয়স্ক শ্রোতা বললেন, আজ থেকে দশ বছর আগে আপনাকে মাতাল অবস্হায় পড়ে থাকতে দেখেছি। আপনি সেই অবস্থা থেকে কিভাবে ফিরে এলেন?? আর কিভাবেই বা ওয়াজের মঞ্চে এলেন??
★”মালিক বিন দিনার” কিছুক্ষণ মাথা নিচু করে রইলেন। তারপর বললেন, ঠিক বলেছেন। আমি সেই ব্যক্তি। শুনুন তাহলে আমার কাহিনীঃ
★এক কদরের রাতে মদের দোকান বন্ধ ছিলো। দোকানিকে অনুরোধ করে এক বোতল মদ কিনলাম বাসায় খাবো বলে। বাসায় ঢুকলাম। ঢুকেই দেখি আমার স্ত্রী নামাজ পড়ছে। আমি আমার ঘরে চলে গেলাম এবং বোতলটা টেবিলে রাখলাম। আমার তিন বছরের শিশু মেয়েটা দৌড়ে এলো, টেবিলের সাথে ধাক্কা খেয়ে মদের বোতল মাটিতে পড়ে ভেঙ্গে গেলো। অবুঝ মেয়েটি খিলখিল করে হাসতে লাগলো। ভাঙ্গা বোতল ফেলে দিয়ে আমি ঘুমিয়ে গেলাম। সে রাতে আর মদ খাওয়া হলোনা।
★পরের বছর আবার লাইলাতুল কদর এলো। আমি আবার মদ নিয়ে বাড়ি এলাম। বোতলটি টেবিলে রাখলাম। হঠাৎ বোতলটির দিকে তাকাতেই কষ্টে বুকটা ফেটে কান্না এলো। মাত্র তিন মাস হলো আমার মেয়েটি মারা গেছে। বোতলটি বাইরে ফেলে দিয়ে সে রাতে ঘুমিয়ে পড়লাম।
★স্বপ্ন দেখলাম এক বিরাট সাপ আমাকে তাড়া করছে। এত বড় সাপ আমি জীবনেও দেখিনি। আমি ভয়ে দৌড়াচ্ছি, এমন সময় এক দূর্বল বৃদ্ধকে দেখলাম। বৃদ্ধ বললো, আমি খুব দূর্বল এবং ক্ষুধার্ত। এই সাপের সাথে আমি লড়াই করতে পারবোনা। তুমি এই পাহাড়ের ডানে উঠে যাও। পাহাড়ের গিয়ে দেখি দাউদাউ করে আগুন জ্বলছে, আর পিছনে এগিয়ে আসছে সাপ। বৃদ্ধের কথা মতো ডানে ছুটলাম। দেখলাম সুন্দর একটা বাগান, আর বাগানে বাচ্চারা সেখানে খেলছে। গেইটে দারোয়ান।
★দারোয়ান বলল, বাচ্চারা দেখো তো এই লোকটিকে,একে সাপটি খেয়ে ফেলবে, নয়তো আগুনে ফেলে দিবে। দারোয়ানের কথায় বাচ্চারা দৌড়ে এলো। তার মধ্যে আমার মেয়েটাও আছে। মেয়েটি আমার ডান হাত জড়িয়ে ধরে বাম হাতে থাপ্পর দিয়ে সাপটিকে দূরে ফেলে দিলো। এতেই সাপটি চলে গেলো। আমি অবাক হয়ে বললাম, মা তুমি এত ছোট!! আর এত বড় সাপ তোমায় ভয় পায়?? মেয়েটি বলল, আমি জান্নাতি মেয়ে। জাহান্নামের সাপ আমায় ভয় পায়।
★বাবা!!ওই সাপটিকে তুমি চিনতে পেরেছো??
★আমি বললাম, না মা!!
★আমার মেয়ে বলল, বাবা! এতো তোমার নফস। নফসকে তুমি এতো বেশি খাবার দিয়েছো যে, সে আজ এতো বড় এতো শক্তিশালী হয়েছে। সে তোমায় আজ জাহান্নামে তাড়িয়ে নিয়ে এসেছে।
★ মেয়েকে বললাম, পথে এক দূর্বল বৃদ্ধ লোক আমায় এখানে আসার পথ দেখিয়ে দিয়েছে সে কে??
★ মেয়ে বলল, তাকেও চিনো নি??সে তোমার রুহ। তাকে তো কোনো দিনও খেতে দাও নি। সে না খেয়ে এতোই দূর্বল হয়ে পড়েছে যে, কোনো রকম বেঁচে আছে।
★আমার ঘুম ভেঙ্গে গেলো। সেই দিন থেকে আমি আমার রুহকে খাদ্য দিয়ে যাচ্ছি। আর নফসের খাদ্য একেবারেই বন্ধ করে দিয়েছি। চোখ বন্ধ করলেই সেই ভয়ানক রুপটি দেখতে পাই আর দেখি রুহ কে। আহা!! কতো দূর্বল, হাঁটতে পারেনা৷ ঝরঝর করে কেঁদে উঠলেন, মালিক বিন দিনার।
[“তাই চলুন নিজের নফসকে হেফাজত করি। নয়তো চিরস্থায়ী হবে জাহান্নাম। মহান আল্লাহ্ তায়ালা আমাদের সবাইকে বোঝার তৌফিক দান করেক”]
🖤আমিন🖤