কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিঃ
করোনা কালে কর্মহীন অসহায় মানুষকে জরুরী ত্রাণ সহায়তা প্রদান ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য সচেতনতা বৃদ্ধিতে দিন-রাত কাজ করে যাচ্ছে “ডোনেট ফর ভূরুঙ্গামারী” নামের একটি ফেসবুক গ্রুপ। দূর্যোগকালে সবাই যখন নিজেকে বাঁচানোর জন্য ঘর বন্দি, ঠিক তখনি মানুষকে বাঁচানোর জন্য জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ঘর থেকে বেড়িয়ে পড়েছে এক ঝাঁক তরুণ। তাদের এ মহতী উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ, পুলিশ প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন সহ সাধারণ জনতা।
“ডোনেট ফর ভূরুঙ্গামারী” গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা অাশিকুর রহমান অাশিক এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, লকডাউনে হঠাৎ কর্মহীন হয়ে যাওয়া মানুষের কথা ভেবে, তাদের সহায়তার জন্য গত ০৫ এপ্রিল গ্রুপটি খোলা হয়। প্রথমদিকে গ্রুপের সদস্যদের সহযোগিতায় শুধুমাত্র উপজেলা সদর কেন্দ্রিক কার্যক্রম শুরু করি অামরা। কাজ করতে গিয়ে একটি বিষয় স্পষ্ট হয় যে, করোনা ঠেকাতে ত্রাণের চেয়ে সচেতনতা বেশি জরুরী। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলের মানুষ করোনার ভয়াবহতা সম্পর্কে একেবারেই অজ্ঞ। তদুপরি ঢাকা, নারায়ণগ, গাজিপুর সহ ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চল থেকে গ্রামে ফেরত মানুষ গুলো এলাকার পরিস্থিতি অারও জটিল করে তুলছে। এমতাবস্থায়, শুধু মাত্র প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগের উপর নির্ভর করে করোনা সংক্রমণ ঠেকানো সম্ভব নয়।
এই উপলব্ধি থেকেই তারা উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নে ডোনেট ফর ভূরুঙ্গামারী গ্রুপের স্বেচ্ছাসেবক টিম গঠন করেন। এপর্যন্ত সংগঠনটির প্রায় দুইশত স্বেচ্ছাসেবক সদস্য রয়েছে। তারা করোনা প্রতিরোধে সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন, সেফটি ট্রেইনিং, ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা চিহ্নিত করণ, হোম কোয়ারান্টাইন ও করোনা উপসর্গ নজরদারি সহ অর্থনৈতিক ও মানসিক ঝুঁকির বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এব্যাপারে তাদের সহযোগিতা করছেন ভূরুঙ্গামারী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পঃপঃ কর্মকর্তা ডাঃ এএসএম সায়েম ও “চর চ্যারিটি ফর চেঞ্জ” এর প্রতিষ্ঠাতা কুড়িগ্রাম জেলার সাবেক এসপি মেহেদুল করিম। অাশিক অারও জানান, একান্ত অনাহারী ব্যক্তিদের অামাদের সাথে যোগাযোগ করার জন্য অামাদের গ্রুপে বেশ কিছু নম্বর দেয়া হয়েছে। ব্যাপক অাবেদন থাকা সত্ত্বেও ফান্ড স্বল্পতার কারেণে অামরা খুব অল্প সংখ্যক মানুষকে ত্রাণ সহায়তা দিতে পেরেছি। তিনি এলাকার হৃদয়বান দানবীর মানুষকে তাদের ফান্ডে ডোনেট করার জন্য ০১৭৬২-৯৫৫৫১৪ নম্বরে যোগাযোগ করার অনুরোধ করেন।
এই বিষয়ে গ্রুপটির সহ-উদ্যোক্তা মতিয়ার রহমান মুরাদ জানান, তারা এরই মধ্যে সংক্রমণ প্রতিরোধ সক্ষম তিনশত মাস্ক নিজেরা তৈরি করে বিনামূল্যে বিতরণ করেছেন। এ পর্যন্ত দুইশত মানুষকে ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হয়েছে।কিন্তু, দুঃখজনক ব্যাপার হচ্ছে যে, গুটি কয়েক ব্যক্তি ছাড়া ফান্ড তৈরিতে কেউ সহযোগিতার হাত বাড়াচ্ছেন না। মুরাদ অারও জানান, অামরা থেমে নেই। অাশিক বাইরে থেকে তার পরিচিত অাত্নীয়-স্বজন এবং বড় ভাইদের কাছ থেকে কিছু অর্থ সংগ্রহ করে ফান্ড তৈরি করার চেষ্টা করছে। পাশাপাশি ভলান্টিয়ারাও কিছু করে অার্থিক সহায়তা করার চেষ্টা করছেন। অামাদের লোকবলের অভাব নেই। দয়াবান ব্যক্তিদের সহযোগিতা পেলে দূর্গত মানুষের ঘরে ঘরে জরুরী সহযোগিতা পৌছে দেয়া সম্ভব।